শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি হামজাকে স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার
- আতাউর রহমান জাবি
- ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০, আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:২৩
নিজ পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারছেন না, চলাফেরা করতে হয় মা-বাবার কাঁধে ভর করে। তবুও চোখমুখে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন। তাইতো শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে (জাবি) ভর্তি হতে ঢাকার শনির আখড়া থেকে ছুটে এসেছেন হামজা আনোয়ার। মায়ের কাঁধে ভর দিয়েই মা-বাবার সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে দিনের পর দিন কষ্ট করে চালিয়ে যাচ্ছেন তার লেখাপড়া। চোখে মুখে একটাই স্বপ্ন যে করেই হোক গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করতে হবে, পড়াশুনা শেষে হতে হবে উদ্যোক্তাা ।
গতকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিজনেস অনুষদভুক্ত ‘ই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রণ করেছেন তিনি।
হামজা আনোয়ারের বাবা আনোয়ার হোসেন পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং মা ফাতেমা-তুজ-জোহরা গৃহিণী। হামজা লিম্ব-গার্ডল মাস্কুলার ডিস্ট্রোফি (এলজিএমডি) নামক এক বিরল জেনেটিক্যাল রোগে আক্রান্ত। এ রোগ প্রতি লাখে দুইজনের হয়ে থাকে বলে জানা যায়। দেশে এখনো এ রোগের চিকিৎসা নেই বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে এ রোগে শরীরের পের্শিগুলো দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পঙ্গুত্বের দিকে ধাবিত হয়।
হামজা আনোয়ার জানান, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই আমি এলজিএমডি নামক এই রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করি। এর পর থেকে ধীরে ধীরে এ রোগ আরো গুরুতর হতে শুরু করে। এসএসসির পর থেকেই একা একা আর হাঁটাচলা করতে পারি না। স্কুল-কলেজের সময়গুলো থেকে পড়াশোনা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠে। আমার শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে বিশ^বিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা পর্যন্ত আসতে হয়েছে। তবুও কখনো হাল ছাড়িনি। আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে পড়তে চাই। পড়াশোনা শেষ করে উদ্যোক্তা হতে চাই। অন্য দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো বাঁচতে চাই।’
এ পর্যন্ত আসার পেছনে মা-বাবার সাপোর্টের কথা একটু আলাদাভাবে বললেন হামজা। তিনি বলেন, আমার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমার মা-বাবা কখনো আমাকে অবহেলা করেননি। বরং ছোটবেলা থেকে অনেক আদর যত্ন করে বড় করেছেন। বিশেষ করে আমার মায়ের কথা স্মরণ করতে চাই।
হামজা আনোয়ারের মা বলেন, আমার বড় ছেলে ছোটবেলা থেকেই চলৎশক্তি হারাতে থাকে। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলে এ পর্যন্ত এসেছে। ধীরে ধীরে সে আরো দুর্বল হচ্ছে। ডাক্তার বলেছে, এ রোগের চিকিৎসা এখনো বের হয়নি। আমরা জানি না সামনের দিনে ওর ভবিষ্যৎ কী হবে। তবে আমি ও ওর বাবা সবসময় ফুল সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, ছেলেটা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন দেখে। তাই আমরাও তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। আমি চাই ছেলেটার স্বপ্ন পূরণ হোক। আমার ছেলে প্রতিবন্ধী কোটায়ও আবেদন করেনি। সে চায় অন্য স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। তাই তার চাওয়া অনুযায়ী প্রতিবন্ধী কোটাও ব্যবহার করিনি।
এ দিকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসব শিক্ষার্থীর জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের সাথে সমন্বয় করে সামনের দিন থেকে সহায়তার ব্যবস্থা করব।’